সৌরজগৎ solar system সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য

সৌরজগৎ solar system হলো সূর্য এবং সূর্যের আকর্ষণের প্রভাবে সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণরত গ্রহ, তাদের উপগ্রহ, অসংখ্য গ্রহাণু এবং ধুলীকনা দ্বারা সৃষ্ট একটি ব্যবস্থা।

ধরুন, হঠাৎ কালকে যদি কেউ এসে আপনাকে বলে যে সূর্য এবং চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে। আপনি কি বিশ্বাস করবেন?

এককথায় না। আপনি তার কথা বিশ্বাস করবেন না।

কিন্তু কেন?

কারণ এখন আপনার কাছে রয়েছে টেলিস্কোপ, স্যাটেলাইট যাদের দ্বারা খুব সহজেই তাকে বোঝাতে পারবেন যে সূর্য নয় বরং পৃথিবী, চাঁদ সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে।

আপনি তাকে এও বলবেন যে শুধু পৃথিবী বা চাঁদ নয়, পৃথিবী ছাড়া আরো সাতটি গ্রহ তাদের উপগ্রহ, অসংখ্য গ্রহাণু সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে।

কিন্তু এসব তো আমরা একদিনে জানতে পারিনি এবং এই তথ্য আবিষ্কারের ইতিহাস এতো সহজ ছিলনা।

কোপারনিকাস ও গ্যালিলিওর সত্যতা প্রমাণ

NASA এর বৈজ্ঞানিকদের মতে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 380 অব্দে ইউডক্সাস নামক ব্যক্তি একটি মডেল তৈরি করেন যেখানে বলা হয় মহাবিশ্বের কেন্দ্রে পৃথিবী রয়েছে এবং তাকে ঘিরে বাকি জ্যোতিষ্ক প্রদক্ষিণ করছে। পরবর্তীকালে গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এই মডেলটিকে আরো বিষদে বর্ণনা করেন এবং তার পরবর্তীতে টলেমি 100 খ্রিস্টাব্দে এই মডেলটিকে আরও সংশোধন করে তার নামকরণ করেন “Geocentric Theory”। এই তত্ত্ব পরবর্তী প্রায় 1400 বছর অবধি প্রচলিত ছিল।

এই ধারণা যে সঠিক নয় তা প্রথম লক্ষ করেন নিকোলাস কোপারনিকাস 1515 সালে। তার মতে পৃথিবীও , মঙ্গল এবং শনির মতই একটি গ্রহ যেটি সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু সমালোচনার কারণে তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেননি। 1543 খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর কিছু আগে তিনি এই তত্ত্বের প্রকাশ করেন।

কিন্তু কোপারনিকাসের তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ করেন বিজ্ঞানী গ্যালিলিও। গ্যালিলিওর দূরবীন আবিষ্কারের পর 1610 সালে এটা প্রমাণিত হয়ে যায় যে পৃথিবী, চাঁদ সহ অন্যান্য গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। তার পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানী কেপলার এবং নিউটন বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে এই তত্ত্বকে সাধারণের গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন। তাদের দেওয়া সূত্রগুলো আজও ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন গবেষণায়।

এইভাবে ক্রমশ বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে আমরা আমাদের সৌরজগৎ সম্বন্ধে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করে চলেছি। আজকের এই লেখায় আমরা আমাদের সৌরজগৎ সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানবো।

সৌরজগৎ কি বা সৌরজগৎ solar system কাকে বলে?

সবার আগে জানা প্রয়োজন সৌরজগৎ কি বা সৌরজগৎ solar system কাকে বলে? সৌরজগৎ হলো সূর্য এবং সূর্যের আকর্ষণের প্রভাবে সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণরত গ্রহ, তাদের উপগ্রহ, অসংখ্য গ্রহাণু এবং ধুলীকনা দ্বারা সৃষ্ট একটি ব্যবস্থা। সহজ কথায় সূর্যের আকর্ষণ বল যতদূর অবধি অনুভূত হয় ততদূর অবধি আমাদের সৌরজগতের ব্যাপ্তি। এটি ঠিক যেনো একটি পরিবারের মতো। পরিবারে যেমন একজন অভিভাবক থাকেন এবং বাকি সদস্যরা তাকে সম্মান করে তার কথা মেনে চলেন, এখানেও সূর্য ঠিক যেনো অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে এবং বাকিরা ওই পরিবারের সদস্য। আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য তাকে ঘিরে 8 টি গ্রহ তাদের উপগ্রহ, অসংখ্য গ্রহাণু নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। সেই নির্দিষ্ট পথকে বলে সেই গ্রহের বা উপগ্রহের কক্ষপথ। বর্তমানে সূর্য এবং আটটি গ্রহ(বুধ,শুক্র,পৃথিবী,মঙ্গল, বৃহস্পতি,শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন) নিয়ে আমাদের এই ছোট্ট সৌরজগৎ।

সূর্যকে কেন্দ্রে রেখে গ্রহগুলির সজ্জা নিম্নরূপ:-

সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ, বুধের পর থেকে শুক্র, তারপরে আমাদের পৃথিবী, পৃথিবীর পরে মঙ্গল, তারপরে থাকে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং শেষে নেপচুন। জেনে রাখা ভালো নেপচুনের পর থাকে প্লুটো নামক বামন গ্রহ।অর্থাৎ বৈজ্ঞানিকদের মতে এটি পুরোপুরি গ্রহের পর্যায়ে পরে না। যদিও পূর্বে প্লুটোকে গ্রহ হিসেবে ধরে গ্রহের সংখ্যা 9 হলেও 2006 সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থা( ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন) প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে সরিয়ে তাকে বামন গ্রহের তালিকায় ঠাঁই দেয়। এতো গেলো গ্রহের সজ্জা। এছাড়াও মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মাঝের অঞ্চলে অসংখ্য ছোট ছোট গ্রহাণুর একটি বেষ্টনী থাকে, এই অঞ্চলকে “অ্যাস্ট্রয়েড বেল্ট” বলা হয়। এইরূপ আর একটি অঞ্চল থাকে নেপচুনের পরে সেখানেও অসংখ্য ছোট বড় গ্রহাণু থাকে। এই অঞ্চলকে বলা হয় “কাইপার বেল্ট”। কাইপর বেল্ট অঞ্চলটি অ্যাস্ট্রইড বেল্টের চেয়ে অনেক বড়।

আমাদের এই সৌরজগৎ আজ থেকে প্রায় 460 কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল গ্যাস এবং ধূলিকণার ঘন মেঘ থেকে যা নিকটবর্তী কোনো নক্ষত্রের বিস্ফোরণের ফলে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবর্তিত হতে থাকে একটি ডিস্কের রূপে। ধীরে ধীরে কেন্দ্রের মাধ্যাকর্ষণ বাড়তে থাকে, যা বেশিরভাগ হাইড্রোজেন গ্যাসকে ভেতরের দিকে টেনে নিয়ে আসে। একটা সময় কেন্দ্রের চাপ এত বেশি বেড়ে যায় যে হাইড্রোজেন গ্যাস হিলিয়াম গ্যাসে রূপান্তরিত হয় এবং তার সাথে প্রচুর শক্তির সৃষ্টি হয়। এইভাবে প্রথমে জন্ম হয় আমাদের সূর্যের এবং ধীরে ধীরে ডিস্কের বাইরের দিকে থাকা ধূলিকণা, গ্যাস ইত্যাদি থেকে বাকি গ্রহের সৃষ্টি হয়।

আমাদের সৌরজগৎ solar system প্রায় 120AU(Astronomical Unit) বা 1796কোটি কিমি দূর অবধি বিস্তৃত । সেক্ষেত্রে অনেকে বলবেন তাহলে আমি আমাদের সৌরজগতকে ছোট্ট বললাম কেনো? তার কারণ বাস্তবে আমাদের কাছে 1796 কোটি কিমি অনেক বেশি বলে মনে হলেও অসীম মহাকাশের বিচারে এই দূরত্ব অতীব নগণ্য।

More by dipayan bose

View profile