BIRYANI – SOME IMPORTANT INFORMATION ABOUT IT

‘বিরিয়ানি’ (biryani) অতি ক্ষুদ্র একটি শব্দ হলেও প্রত্যেকটি দেশের প্রত্যেকটি কোণার মানুষের মনের মধ্যে গভীরে জায়গা করে নিয়েছে এই লোভনীয় পদটি। ৮ থেকে ৮০ আমরা বিরিয়ানি কে সবাই ভালোবাসি। সেই পুরাতনকাল থেকে বিরিয়ানির প্রতি মানুষের ভালোবাসাটা যেন অটুট। বর্তমানে প্রতিটি অনুষ্ঠান বিরিয়ানি ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ। বলা বাহুল্য, যে বিরিয়ানি একটি পরিপূর্ণ খাবার হিসেবে চিহ্নিত, কারণ বিরিয়ানিতে আছে চাল, মাংস, আলু ও কিছু কিছু বিরিয়ানিতে আবার সেদ্ধ ডিমও থাকে। কিন্তু শুধু স্বাদের জন্য বিরিয়ানি খেলেই যে বিরিয়ানি কে ওতপ্রোতভাবে জানা যাবে তা নয়। আজকে জানবো বিরিয়ানি সম্পর্কে নানান রহস্য। এই বিরিয়ানির উৎপত্তি কোথায়, বিরিয়ানির পেছনে কি ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে – এই সমস্ত কিছুর তথ্য শেয়ার করা হবে এই ব্লগে।

বিরিয়ানির (BIRYANI) উৎস:

অনেকেই আছে যারা বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করেন কিন্তু বিরিয়ানি ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিরিয়ানির ইতিহাস। বিরিয়ানি (BIRYANI) শব্দটি এসেছে পারস্য শব্দ ‘ইরান’ থেকে, যার অর্থ হলো প্রায় অর্ধেকে। প্রথমার্ধে নাকি এই বিরিয়ানিতে কোনোরকম চাল ব্যবহার করা হতো না। ভাবতে অবাক লাগছে, চাল ছাড়া বিরিয়ানি কিভাবে সম্ভব?

বিরিয়ানি (biryani) সাধারণত একটি সাউথ এশিয়ান খাবার। এটা ছিল প্রধানত রাজ-রাজা ও নবাবদের খাবার। তাহলে সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এই শাহী খাবারটি কিভাবে সাধারনদের মধ্যে প্রচলিত হলো।

সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী ছিলেন রাজ্য সম্পর্কে খুবই সচেতন। তিনি ছিলেন শিল্পী মনোভাবাসম্পন্ন এক পবিত্র সত্ত্বা। কিন্তু একবার মোগল সাম্রাজ্যের সময় তিনি লক্ষ্য করেছিলেন তার সেনাবাহিনী সকলে বেশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর কারণ একটাই যে পুরুষদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার প্রদাষ করা যাচ্ছে না। তাই দুর্বল হয়ে পড়ছে এই লড়াকু পুরুষজাতি। তখন তিনি নিজে চলে যান রাজবাড়ির পাকশালায়। তিনি সব রকম পুষ্টিকর খাবার যেমন চাল, মাংস, সবজি ও নানান মসলা সংমিশ্রনে সৃষ্টি করেন এক নতুন খাবার যার নাম দেওয়া হয় বিরিয়ানি। এইভাবেই এই লোভনীয় বিরিয়ানি সৈন থেকে ধীরে ধীরে এই সমস্ত জনসাধারণের কাছে আসতে শুরু করে। এরপর এটি সাউথ এশিয়ার সবথেকে জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়।

বিরিয়ানির রকমসকম:

জানলে অবাক হতে পারেন বিরিয়ানি খায়নি এমন রকমের মানুষ খুব কমই আমাদের দেশে আছেন দুর্দান্ত স্বাদ ও অসাধারণ গন্ধের জন্য সারা দেশজুড়ে সকলের মন জয় করে ফেলেছে এই বিরিয়ানি। এই খাবারের আগমন আমাদের দেশে ঘটে উত্তর ভারতের মোগলদের আগমনের সাথে সাথে। তবে উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণ ভারতের বিরিয়ানির তুলনামূলক আলাদা। কারণ দক্ষিণ ভারতের মানুষ বেশিরভাগই নিরামিষভোজী। আমরা চলতি জীবনে বিশেষ করে দুই রকমের বিরিয়ানি সম্পর্কে পরিচিত চিকেন বিরিয়ানি ও মাটন বিরিয়ানি। কিন্তু এই দুই প্রকার বিরিয়ানি ছাড়াও যে আরো নানান রকম বিরিয়ানি আছে তা জানেন কি আজ আমরা আলোচনা করব। কত রকমের বিরিয়ানি আছে আমাদের দেশে প্রচলিত এবং কি কি?

  • হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি: এই বিরিয়ানি হল সবথেকে বেশি পরিচিত বিখ্যাত বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানি তুলনামূলকভাবে একটু মসলা সমৃদ্ধ হয় এবং এতে পুদিনা পাতার ব্যবহার করা হয়।

  • কলকাতা বিরিয়ানি: এই বিরিয়ানিটি কলকাতার মধ্যে তথা মাছে-ভাতে বাঙ্গালীদের মধ্যে একটি অত্যন্ত প্রিয় বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানিতে মাংস ও আলুর সাথে ডিম সেদ্ধ টি অবশ্যই পাওয়া যায়।

  • তেহারি: তেহারির চেহারা যদিও প্রচলিত বিরিয়ানি থেকে আলাদা, তবুও তেহারি একপ্রকার বিরিয়ানির মধ্যেই পড়ে। এতে চালের সঙ্গে মাংস থাকে চিনতু আলু ও ডিম একদমই থাকে না বলা চলে। এক্ষেত্রে মাংসের টুকরো গুলি ছোট ছোট করে দেওয়া হয়।

  • আম্বুর বিরিয়ানি: এই বিরিয়ানিটি তামিলনাড়ুর ভেলোরে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। এই বিরিয়ানি সাধারণত বেগুনের কারি ও রায়তা সহযোগে খাওয়া হয়।

উক্ত চারটি বিরিয়ানি ছাড়াও বোম্বে বিরিয়ানি, কাশ্মীরি বিরিয়ানি, লাহোরি বিরিয়ানি, সিন্ধ্রি বিরিয়ানি, মেমোনি বিরিয়ানি ভাটখালি বিরিয়ানি ইত্যাদি নানা প্রকার বিরিয়ানি আমাদের আনাচে কানাচে প্রচলিত আছে।

দক্ষিণ ভারতের বিরিয়ানি

দক্ষিণ ভারতে সাধারণত মুরগির মাংস, খাসির মাংস ও বাসমতি চাল ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিরিয়ানি পাওয়া যায় মূলত মুরগির মাংস, চিংড়ি আর মটন দিয়ে। বিরিয়ানির ইতিহাস অনুসারে জানা যায় ১৮৯০ সালে তামিলনাড়ু রামপুরহাট বাবুর্চির বিরিয়ানি প্রথম রান্না করেন। সেই থেকেই বিরিয়ানির প্রচলন হয়। অউধি মটন বিরিয়ানি, লখনৌ মুরগির বিরিয়ানি, দম বিরিয়ানি ইত্যাদি নানা ধরনের বিরিয়ানি পাওয়া যায়। তবে সব থেকে বেশি পরিচিত অউধি মটন বিরিয়ানি। কেরালায় পাওয়া যায় এটি যা পাঁঠার মাংস, মুরগির মাংস এবং ডিম দিয়ে বিরিয়ানি তৈরি হয়।

ভেজ বিরিয়ানি

বর্তমানে নিরামিষাসীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয় ভেজ বিরিয়ানি। এই ভেজ বিরিয়ানিতে ব্যবহার করা হয় বিরিয়ানিরই সমস্ত মসলা, শুধুমাত্র মাংস পেঁয়াজ রসুনের কোনো ছোঁয়া থাকেনা। আলু, গাজর, পনির, ফুলকপি সহ নানান ধরনের সবজি দেওয়া হয়। অনেক সময় বিভিন্ন পুজো বাড়িতে এই ভেজ বিরিয়ানি ভোগের ক্ষেত্রেও নিবেদন করা হয়ে থাকে।

বিরিয়ানির প্রধান উপকরণ:

বিরিয়ানি (biryani) সাধারণত দু প্রকার হয়ে থাকে – পাক্কি বিরিয়ানি এবং কাচ্চি বিরিয়ানি। পাক্কি বিরিয়ানি মানে হলো প্রথমে বিরিয়ানির মাংসটিকে মসলা সহযোগে কষিয়ে অর্ধেক সিদ্ধ করা বিরিয়ানি চালের সঙ্গে তৈরি করা। আর কাচ্চি বিরিয়ানি মানে হল এক্ষেত্রে মাংসটিকে আগে থেকে কষানো হয় না। মাংসটিকে বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে ম্যারিনেট করে রেখে দেওয়া হয় এবং সেটিকে চালের সঙ্গে সিদ্ধ করে রান্না করা হয়। প্রধানত এপার বাংলায় পাক্কি বিরিয়ানির প্রচলন বেশি। অপরদিকে বাংলাদেশে কাচ্চি বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা লক্ষণীয়।

যদিও বিরিয়ানিতে নানা রকমের উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, কিন্তু বিরিয়ানির দুটি মূল উপকরণই হলো চাল ও মাংস। এক্ষেত্রে ভাতের চাল ব্যবহার করা যায় না। বিরিয়ানির চাল লম্বা এবং সরু হয়ে থাকে। বাসমতি, চিনিগুড়া, কালিজিরা এই সমস্ত চালই বিশেষত ব্যবহার করা হয়। আর মাংসের ক্ষেত্রে পছন্দমত মুরগি, খাসি ও গরুর মাংস বেছে নেওয়া যায়। যারা মাংস খেতে অভ্যস্ত নন তাদের জন্য শুধুমাত্র ডিম ও আলু দিয়ে বিরিয়ানি তৈরি করা সম্ভব হয়।

বিরিয়ানির সিক্রেট মশলা:

এটি সত্যি যে বিরিয়ানির প্রধান উপকরণ হলো মাংস এবং চাল, কিন্তু বিরিয়ানিকে বিরিয়ানি করে তুলেছে বেশ কিছু মসলার সংমিশ্রণ। প্রথমে জায়ফল, জয়ত্রী, জিরেগুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, ছোট এলাচ, বড় এলাচ, স্টার অ্যানিস, লবঙ্গ, দারচিনি এদেরকে কোন মতেই বাদ দেওয়া চলে না। এসব মসলা ছাড়াও বিরিয়ানির সিক্রেট মসলাতে সামিল থাকে মৌরিগুড়ো, শুকনো লঙ্কা, গোটা জিরে ও গোটা গোলমরিচ। এই সমস্ত মসলাকে হালকা হাতে টেলে নেওয়ার পর গুঁড়ো করে তৈরি করা হয় বিরিয়ানির সিক্রেট মসলা। যদিও বাজারে প্রচলিত আছে বিভিন্ন কোম্পানির বিরিয়ানি মসলা, তবুও বাড়িতে বানানো বিরিয়ানি মসলার স্বাদই অন্যরকম হয়।

উপসংহার:

উপরোক্ত পঙক্তিগুলি থেকে আমরা সকলেই জানলাম বিরিয়ানির ইতিহাস, এর উপকরণ এবং বিরিয়ানি বানানোর আসল রহস্য। যদিও ভিন্ন ভিন্ন রেস্তোরাঁতে এখন অহরহই বিরিয়ানি পাওয়া যায়, তবুও বাড়িতে বানিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার স্বাদ ও মজা যেন সবকিছুর ঊধ্বে।

জেনে নিন নতুন খাবারের রেসিপি এবং ইতিহাস

More by dipayan bose

View profile